নামাজের পর দু’আ করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেও ফরজ নামাজের পর বিভিন্ন তাসবিহ, তাহলিল ও দু’আ করতেন এবং সাহাবিদেরও শিক্ষা দিতেন। নামাজের পর দু’আ করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:
মাসনুন দু’আ ও জিকির
ফরজ নামাজের পর রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন মাসনুন (সুন্নাহসম্মত) দু’আ ও জিকির পাঠ করতেন। এগুলো হলো:
তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলা: (أَسْتَغْفِرُ اللهَ) অর্থাৎ “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।” (মুসলিম)
‘আল্লাহুম্মা আংতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ পাঠ করা: (اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ)
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনিই শান্তিদাতা এবং আপনার থেকেই শান্তি আসে। আপনি বরকতময়, হে প্রতাপ ও সম্মানের অধিকারী।” (মুসলিম, আহমদ)
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আ’তাইতা ওয়া লা মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়া লাত ইয়ানফাউ যাল জাদ্দি মিনাল জাদ্দু’ পাঠ করা: (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ اللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ)
অর্থ: “এক আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তার কোনো শরিক নেই। সার্বভৌমত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসা তারই জন্য এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! আপনি যা দিতে চান তা রোধ করার কেউ নেই, আর আপনি যা রোধ করেন তা দেওয়ার কেউ নেই। আপনার কাছে (নেক আমল ছাড়া) কোনো সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না।” (সহিহ বুখারি)
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।” (নাসায়ি)
৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং একবার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু; ওয়ালাহুল হামদু; ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির’ পাঠ করা: এতে গুনাহসমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসলিম)
সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করা: বিশেষত ফজর ও মাগরিবের পর এগুলো তিনবার করে পাঠ করা সুন্নাহ। (আবু দাউদ, তিরমিযী)
‘আল্লাহুম্মা আ’ইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক’ পাঠ করা: (اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ)
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার স্মরণ, আপনার কৃতজ্ঞতা এবং সুন্দরভাবে আপনার ইবাদত করার ব্যাপারে সাহায্য করুন।” (আবু দাউদ)
সম্মিলিত দু’আ (মোনাজাত) প্রসঙ্গে
ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মোনাজাত করা যাবে কি না, এই বিষয়টি নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কিছু আলেম এটিকে জায়েজ বা উত্তম মনে করেন, আবার কিছু আলেম এটিকে সুন্নাহ পরিপন্থী বা বিদ’আত মনে করেন, কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবিদের থেকে ফরজ নামাজের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মোনাজাতের ধারাবাহিক আমল প্রমাণিত নয়।
তবে, একাকী দু’আ করার ক্ষেত্রে কোনো মতানৈক্য নেই। যে কোনো ব্যক্তি নামাজের পর আল্লাহ তায়ালার কাছে তার প্রয়োজন ও চাওয়া-পাওয়া একাকী দু’আ করে জানাতে পারেন। হাদীসে এসেছে যে, “যখন তুমি নামাজে বসবে তখন আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা কর এবং আমার উপর দরুদ পড়, তারপর আল্লাহর নিকট দুআ কর, কবুল হবে।” (তিরমিযী)
সুতরাং, নামাজের পর মাসনুন জিকির ও দু’আগুলো পাঠ করা এবং একাকী আল্লাহর কাছে দু’আ করা নিঃসন্দেহে সুন্নাহসম্মত ও সওয়াবের কাজ।
আপনার যদি আরও কোনো specific দু’আ বা এর নিয়মাবলী সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে হয়, তাহলে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।