তাফসির (আরবি: تفسير) একটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো ব্যাখ্যা করা, স্পষ্ট করা, বিশ্লেষণ করা বা প্রকাশ করা। ইসলামি পরিভাষায়, তাফসির বলতে কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্ম ব্যাখ্যা করা এবং সেগুলোর উদ্দেশ্য ও নির্দেশাবলী স্পষ্ট করাকে বোঝায়। যিনি তাফসির করেন, তাকে মুফাসসির বলা হয়।
তাফসির (আরবি: تفسير) একটি আরবি শব্দ, যার আভিধানিক অর্থ হলো ব্যাখ্যা করা, স্পষ্ট করা, বিশ্লেষণ করা বা প্রকাশ করা। ইসলামি পরিভাষায়, তাফসির বলতে কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও মর্ম ব্যাখ্যা করা এবং সেগুলোর উদ্দেশ্য ও নির্দেশাবলী স্পষ্ট করাকে বোঝায়। যিনি তাফসির করেন, তাকে মুফাসসির বলা হয়।
তাফসিরের গুরুত্ব
কুরআন মাজিদ মানুষের হেদায়েতের জন্য নাজিল হয়েছে। তবে কুরআনের ভাষা ও ভাবের গভীরতার কারণে এর অনেক আয়াতের অর্থ ও ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন হতে পারে। এক্ষেত্রে তাফসিরের প্রয়োজন হয়। তাফসিরের মূল উদ্দেশ্য হলো:
কুরআনের অর্থ অনুধাবন: কুরআনের শাব্দিক অর্থ, ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ, এবং এর অন্তর্নিহিত ভাবকে স্পষ্ট করা।
আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট: কোনো আয়াত কখন, কেন এবং কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাজিল হয়েছে (শানে নুযূল) তা জানা।
শরিয়তের আহকাম ও নির্দেশাবলী জানা: কুরআনে বর্ণিত বিধি-বিধান, হালাল-হারাম, এবং বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা।
কুরআন ও সুন্নাহর সম্পর্ক: কুরআনের আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস ও সুন্নাহর গুরুত্ব তুলে ধরা।
গভীর জ্ঞান অর্জন: কুরআনের আয়াত থেকে প্রজ্ঞা, উপদেশ এবং জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা বের করা।
তাফসিরের প্রকারভেদ
তাফসির মূলত দুই প্রকার:
১. তাফসির বিল মাসূর (বর্ণনামূলক তাফসির): এটি কুরআনের ব্যাখ্যা করার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কুরআনের আয়াতকে কুরআন দিয়েই ব্যাখ্যা করা হয় (অর্থাৎ, এক আয়াত দিয়ে অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা), অথবা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস, সাহাবায়ে কেরামের উক্তি এবং তাবেঈনদের ব্যাখ্যা দ্বারা আয়াতসমূহকে বিশ্লেষণ করা হয়। এই ধরনের তাফসিরে নিজের মতামত বা যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না, বরং পূর্বসূরিদের বর্ণনার উপর নির্ভর করা হয়।
২. তাফসির বির রায় (বিবেকপ্রসূত তাফসির): এই প্রকার তাফসিরে মুফাসসির তার নিজস্ব জ্ঞান, যুক্তি এবং ইজতিহাদের ভিত্তিতে কুরআনের ব্যাখ্যা করেন। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই শরিয়তের মূলনীতি, আরবি ভাষা ও ব্যাকরণ, এবং ইসলামের অন্যান্য শাখা-প্রশাখার জ্ঞান থাকতে হয়। মনগড়া বা ভিত্তিহীন ব্যাখ্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। নিন্দনীয় তাফসির বির রায় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
তাফসির করার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
একজন মুফাসসির হওয়ার জন্য অনেক গভীর জ্ঞান ও যোগ্যতার প্রয়োজন। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:
বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাস: সঠিক ইসলামি আকীদা থাকা অপরিহার্য।
কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান: কুরআন ও সহীহ হাদিসের ওপর গভীর পাণ্ডিত্য।
আরবি ভাষার জ্ঞান: আরবি ব্যাকরণ, শব্দতত্ত্ব (লুগাত), এবং অলংকার শাস্ত্রে (বালাগাত) দক্ষতা।
শানে নুযূল সম্পর্কে জ্ঞান: আয়াত নাজিলের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে অবগত থাকা।
নাসিখ-মানসুখ (রহিতকারী ও রহিতকৃত আয়াত) সম্পর্কে জ্ঞান: কুরআনের কোন আয়াত কোন আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে, সে সম্পর্কে জানা।
ফিকহ ও উসূলে ফিকহের জ্ঞান: ইসলামিক আইনশাস্ত্র এবং এর মূলনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা।
তাকওয়া ও ইখলাস: আল্লাহর ভয় এবং বিশুদ্ধ নিয়তে তাফসির করা।
তাফসির মানব জীবনের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র, যা ছাড়া কুরআনের গভীর অর্থ ও উদ্দেশ্য বোঝা প্রায় অসম্ভব।