সুরকরে সুরেলা তেলাওয়াত

কুরআন সুর করে তেলাওয়াত করা ইসলামের একটি প্রশংসনীয় আমল, যদি তা নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে থাকে। একে আরবিতে ‘তাঘান্নী’ বা ‘তাহসিন আল-সাওত’ (কণ্ঠ সুন্দর করা) বলা হয়।

কুরআন সুর করে তেলাওয়াতের মূলনীতি:

  • সুন্দর কণ্ঠস্বর উৎসাহিত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার কণ্ঠ দিয়ে কুরআনকে সুন্দর করে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (বুখারী) এটি নির্দেশ করে যে কুরআন সুন্দর স্বরে তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব (পছন্দনীয়)। আল্লাহ তা’আলা এমন তেলাওয়াত পছন্দ করেন যা মনোমুগ্ধকর হয়।
  • স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক সুর: সুর করে তেলাওয়াত এমন হওয়া উচিত যা প্রাকৃতিক এবং অতিরঞ্জন মুক্ত। যদি সুর এমন হয় যে তা স্বাভাবিকভাবে আসে, তবে তা জায়েজ। উদাহরণস্বরূপ, সাহাবী আবু মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) এর তেলাওয়াত এতটাই সুন্দর ছিল যে নবী করীম (সাঃ) তার প্রশংসা করে বলেছিলেন, “তোমাকে দাউদ (আঃ)-এর বংশের সুর দেওয়া হয়েছে।”
  • তাজবীদের নিয়ম মেনে চলা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সুরের কারণে তাজবীদের (কুরআন তেলাওয়াতের নিয়মাবলী) কোনো পরিবর্তন যেন না হয়। হরফের উচ্চারণ, মাদ (দীর্ঘকরণ), গুন্নাহ (নাসিক্য ধ্বনি) ইত্যাদি তাজবীদের প্রতিটি নিয়ম যথাযথভাবে পালন করতে হবে। যদি সুরের কারণে হরফ বা শব্দের উচ্চারণ বিকৃত হয়ে যায়, তবে তা হারাম বা অপছন্দনীয়।
  • সঙ্গীতের সুর পরিহার: এমন সুর যা সঙ্গীতের নিয়ম (যেমন – মাগামাত, তাল, লয়) অনুসরণ করে এবং কুরআনকে গান বা বিনোদনের মতো শোনায়, তা ইসলামী শরীয়তে নিন্দনীয়। কুরআনকে এমনভাবে তেলাওয়াত করা উচিত যা এর পবিত্রতা ও গুরুত্ব বজায় রাখে এবং শ্রোতাকে আল্লাহর প্রতি বিনয়ী করে তোলে।
  • অর্থ বিকৃত না করা: সুরের কারণে যেন আয়াতের অর্থ বিকৃত না হয় বা কোনো শব্দের উচ্চারণ পরিবর্তিত না হয়।

তাজবীদের গুরুত্ব:

তাজবীদ হলো কুরআন সঠিকভাবে তেলাওয়াত করার বিজ্ঞান। এর নিয়মাবলী মেনে তেলাওয়াত করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। তাজবীদের কিছু মৌলিক নিয়ম হলো:

  • নুন সাকিন ও তানভীনের নিয়ম: ইজহার, ইদগাম, ইক্বলাব, ইখফা।
  • মিম সাকিনের নিয়ম: ইখফা শাফাভী, ইদগাম শাফাভী, ইজহার শাফাভী।
  • মাদ (দীর্ঘকরণ) এর নিয়ম: মাদ তাবিয়ী, মাদ আরিয লিসসুকুন, মাদ লাযিম ইত্যাদি।
  • ক্বালকালাহ: নির্দিষ্ট কিছু হরফ উচ্চারণে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করা।
  • ভারী ও হালকা হরফ: কিছু হরফকে ভারী (তাফখীম) এবং কিছুকে হালকা (তারকীক) ভাবে উচ্চারণ করা।

সংক্ষেপে, সুর করে তেলাওয়াত করা ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েজ ও প্রশংসনীয়, যতক্ষণ তা তাজবীদের নিয়ম মেনে হয় এবং এর পবিত্রতা ও অর্থ বিকৃত না হয়। এটি একটি সুন্দর ও বিনয়ী উপায়ে আল্লাহর কালামকে উপস্থাপন করার একটি মাধ্যম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *